শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিবছর গড়ে পাচার হয় ১৬ বিলিয়ন ডলার
অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি: শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন জমা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত দলটি রবিবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের বিশদ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।
প্রতিবেদন জমা উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে অর্থনীতির প্রতিটি খাতের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে, উন্নয়নের গল্প তৈরিতে কীভাবে পরিসংখ্যান ম্যানুপুলেট করা হয়েছে এবং ভেতরে ভেতরে লুটপাটের মহাযজ্ঞ চলেছে।
প্রতিবেদনের গুরুত্ব
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিক খাতে যে ধরনের অনিয়ম ঘটেছে, তা ছিল গভীর উদ্বেগের বিষয়। এসব ঘটনার সাক্ষী আমরা সবাই, কিন্তু তেমনভাবে কেউ এটি নিয়ে মুখ খোলেননি।”
তিনি আরও বলেন, “শ্বেতপত্রের এই পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠনে দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।”
প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু
“বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র” শিরোনামের এই প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য, ব্যাংকিং খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ এবং পরিসংখ্যানের মান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও তার আর্থিক দিকের নেপথ্যে থাকা দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র।
বিশেষ করে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর খরচ, সময় ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য পরিস্থিতি, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত, নারী উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুগুলোতেও আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রধান পর্যবেক্ষণ
১. পরিসংখ্যান ম্যানিপুলেশন: অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে উন্নয়নের ভুয়া গল্প তৈরি হয়েছে।
২. বৈদেশিক মুদ্রা পাচার: প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য উদ্বেগজনক।
৩. মেগা প্রকল্প: বিশাল খরচ ও সময় অপচয়ের পাশাপাশি অনিয়মের নজির।
৪. ব্যাংকিং খাত: খেলাপি ঋণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটিগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
৫. রাজস্ব ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা: স্বচ্ছতার অভাব ও অপচয়ের বিষয় উঠে এসেছে।
ভবিষ্যৎ করণীয়
প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করেছে এবং এগুলো থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শ্বেতপত্র কমিটির এই বিশ্লেষণ বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের পথে নতুন আলো ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Comments
Post a Comment